
নিউমোনিয়া (Pneumonia) কেন হয়? আর এর সংক্রমণ কি | 2024
নিউমোনিয়া (Pneumonia) হলো ফুসফুসের একটি প্রদাহজনিত রোগ যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা ফাঙ্গাস দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে। এটি ফুসফুসের বায়ুথলিতে তরল বা পুঁজ জমা হওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর, ও ঠান্ডা লাগার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। শিশু, বৃদ্ধ, এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিউমোনিয়া নিরাময় সম্ভব, তবে অবহেলা করলে এটি জীবনঘাতী হতে পারে। সঠিকভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ভ্যাকসিন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
নিউমোনিয়া (Pneumonia) কিভাবে হয় :
নিউমোনিয়া (Pneumonia) সাধারণত সংক্রামক জীবাণু, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা ফাঙ্গাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। নিউমোনিয়া হওয়ার কিছু প্রধান কারণ হলো:
1. ব্যাকটেরিয়া: সবচেয়ে সাধারণ ব্যাকটেরিয়া হলো স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনিয়া, যা ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াও নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যেমন হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ও স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস।
2. ভাইরাস: ইনফ্লুয়েঞ্জা, রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (RSV), এবং করোনাভাইরাস (যেমন কোভিড-১৯) সহ বিভিন্ন ভাইরাস নিউমোনিয়া (Pneumonia) সৃষ্টি করতে পারে।
3. ফাঙ্গাস: ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকলে, বিশেষত এইডস বা ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ফাঙ্গাল ইনফেকশন দ্বারা নিউমোনিয়া হতে পারে। যেমন হিস্টোপ্লাজমোসিস, ককসিডিওডোমাইকোসিস।
4. অন্য উপায়: কিছু ক্ষেত্রে, খাদ্য, পানীয় বা বমি শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে তা অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
সাধারণত, নিউমোনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমিত স্থানে জীবাণু বৃদ্ধি পেয়ে ফুসফুসের এয়ার স্যাকগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে তরল বা পুঁজ জমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট হয়।
এইডস (AIDS) কেন হয় এবং এর নিরাময় কি | 2024
নিউমোনিয়া (Pneumonia) হলে কেমন অনুভব হয় :
নিউমোনিয়া হলে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণত, নিউমোনিয়ার উপসর্গগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো অন্তর্ভুক্ত:
1. জ্বর: উচ্চ তাপমাত্রা, ঠান্ডা লাগা বা কাঁপুনি।
2. কাশি: শুকনো বা কফ সহ কাশি। কফে রক্তও থাকতে পারে।
3. শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা শ্বাস ফেলার সময় ব্যথা অনুভব করা।
4. বুকের ব্যথা: বিশেষ করে গভীর শ্বাস নেয়ার সময় বা কাশি করার সময়।
5. থাকা খাওয়া না পছন্দ করা: ক্ষুধামন্দা এবং খাবারে অনীহা।
6. শরীর ব্যথা: বিশেষত পেশি ও সংযোগস্থলে ব্যথা অনুভব করা।
7. অবসাদ: অত্যন্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
8. বমি বা ডায়রিয়া: কিছু ক্ষেত্রে বমি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।
9. শিশুদের ক্ষেত্রে: দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, খাওয়াতে অসুবিধা, এবং নীলচে ঠোঁট ও নখ হতে পারে।
বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো কম প্রকট হতে পারে, তবে তীব্র অবসাদ, বিভ্রান্তি, বা হঠাৎ করে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ সময়মতো চিকিৎসা না পেলে এটি জীবনঘাতী হতে পারে।
নিউমোনিয়া (Pneumonia) এর চিকিৎসা :
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা রোগের কারণ, সংক্রমণের তীব্রতা এবং রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, নিউমোনিয়ার চিকিৎসার প্রধান উপায়গুলো নিম্নরূপ:
1. অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা জরুরি।
2. অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ: ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হতে পারে, বিশেষ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে।
3. অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ: ফাঙ্গাল ইনফেকশনজনিত নিউমোনিয়ার জন্য অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।
4. শ্বাস প্রশ্বাসের সহায়তা: শ্বাসকষ্ট বেশি হলে অক্সিজেন থেরাপি বা ভেন্টিলেটর সহায়তা দেওয়া হতে পারে।
5. জ্বর এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ জ্বর ও ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
6. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: রোগীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করা জরুরি।
7. হাসপাতালে ভর্তি: সংক্রমণ গুরুতর হলে বা জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন হতে পারে।
8. ভ্যাকসিন: নিউমোনিয়া প্রতিরোধের জন্য নিউমোকোকাল ভ্যাকসিন এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন গ্রহণ করা যেতে পারে।
নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত এবং নিজে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে নিউমোনিয়া থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
নিউমোনিয়া (Pneumonia) হলে ঘরোয়া ভাবে কি করা উচিত :
নিউমোনিয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে আরাম পাওয়া এবং সুস্থতা ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। তবে, ঘরোয়া পদ্ধতি কখনই চিকিৎসকের পরামর্শ ও ওষুধের বিকল্প হতে পারে না। এখানে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি দেওয়া হলো যা নিউমোনিয়া হলে উপকারী হতে পারে:
1. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন। বিশ্রাম শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে।
2. পানীয় গ্রহণ: প্রচুর জল, ফলের রস, এবং স্যুপ পান করুন। এটি শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে এবং শ্বাসনালী থেকে শ্লেষ্মা দূর করতে সহায়তা করে।
3. বাষ্প শ্বাস: বাষ্প শ্বাস নেওয়া শ্বাসনালী খুলতে এবং শ্লেষ্মা পাতলা করতে সহায়ক হতে পারে। গরম পানির বাষ্প মুখ ও নাক দিয়ে শ্বাস নিন।
4. গরম পানির গার্গল: গরম জলে লবণ মিশিয়ে গার্গল করা গলার ব্যথা ও শ্লেষ্মা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
5. আর্দ্র পরিবেশ: ঘরে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন বা গরম পানির পাত্র রেখে আর্দ্রতা বৃদ্ধি করুন। এটি শ্বাস নেওয়া সহজ করতে পারে।
6. পুষ্টিকর খাবার: পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খান। স্যুপ, ফল, এবং সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
7. ধূমপান এড়িয়ে চলুন: ধূমপান বা ধূমপানের ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ফুসফুসের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে।
8. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। খুব গরম বা ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
9. ওষুধের সময়মত সেবন: চিকিৎসকের নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধ সঠিক সময়ে সেবন করুন।
ঘরোয়া পদ্ধতি উপসর্গ কিছুটা লাঘব করতে সহায়ক হতে পারে, তবে নিউমোনিয়া হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করা জরুরি।