Heart Attack কেন হয়? আর এর থেকে কিভাবে বাঁচা সম্ভব | 2024

হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) একটি গুরুতর মেডিকেল অবস্থা, যেখানে হৃদপিণ্ডের পেশীতে রক্ত সঞ্চালন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। এটি সাধারণত হৃদপিণ্ডের ধমনীতে জমাট বাঁধা রক্ত বা প্ল্যাকের কারণে ঘটে। প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে বুকে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমি ভাব, এবং শরীরের উপরের অংশে অস্বস্তি অন্তর্ভুক্ত। দ্রুত চিকিৎসা না পেলে এটি মারাত্মক হতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ও ধূমপান পরিহার করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। চিকিৎসা হিসেবে ওষুধ, সার্জারি, এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়া হয়।

Heart Attack হওয়ার লক্ষণ গুলি :

হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack), যাকে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনও বলা হয়, তখন ঘটে যখন হৃদপিণ্ডের কোনো অংশে রক্ত সঞ্চালন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সেই অংশের হৃদপেশি অক্সিজেনের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মারা যায়। এটি একটি গুরুতর অবস্থা যা দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি বিভিন্ন হতে পারে এবং ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। এখানে হার্ট অ্যাটাকের বিভিন্ন লক্ষণ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি

হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি। এটি সাধারণত বুকে মাঝখানে বা বাঁ পাশে অনুভূত হয় এবং এটি এক ধরনের চেপে ধরা, চাপ, বা পুড়িয়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে। এই ব্যথা কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে বা থেমে থেমে আসতে পারে।

২. শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা

বুকের ব্যথা ছাড়াও, ব্যথা বা অস্বস্তি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত ব্যথা হাত, কাঁধ, ঘাড়, চোয়াল, বা পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে বাম হাতের ব্যথা অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) পূর্বলক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।

৩. শ্বাসকষ্ট

শ্বাসকষ্ট বা দম বন্ধ হওয়ার অনুভূতি হার্ট অ্যাটাকের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। এটি হঠাৎ করে শুরু হতে পারে এবং কোনো শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াও হতে পারে। এই লক্ষণটি সাধারণত বুকের ব্যথার সাথে সম্পর্কিত থাকে, তবে এটি একা একাও উপস্থিত হতে পারে।

৪. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া

হার্ট অ্যাটাকের সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বা ঠান্ডা ঘাম হওয়া সাধারণ একটি লক্ষণ। এটি অনেক সময় ভয় বা উদ্বেগের সাথে মিলিত হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয়।

৫. বমি ভাব বা বমি

অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের সময় বমি ভাব বা বমি হতে পারে। এটি সাধারণত পেটের ব্যথা বা অস্বস্তির সাথে সম্পর্কিত থাকে এবং অনেকেই এটি সাধারণ অম্লতা বা হজম সমস্যার সাথে গুলিয়ে ফেলতে পারেন।

৬. মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা

হার্ট অ্যাটাকের সময় মাথা ঘোরা বা হালকা মাথাব্যথা হতে পারে। এটি রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যাওয়ার কারণে ঘটে। পাশাপাশি অতিরিক্ত দুর্বলতা বা ক্লান্তিও অনুভূত হতে পারে।

৭. পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি

কিছু ক্ষেত্রে, পেটের উপরের অংশে বা বুকের নিচের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। এটি অনেক সময় সাধারণ অম্লতা বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণও হতে পারে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ

মহিলাদের ক্ষেত্রে, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। মহিলারা প্রায়ই পুরুষদের তুলনায় কম সাধারণ লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, মহিলাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, বমি ভাব, পিঠ বা চোয়ালে ব্যথা বেশি হতে পারে। অনেক সময় মহিলারা ক্লান্তি বা ঘুমের সমস্যাও অনুভব করতে পারেন, যা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে।

সতর্কতা এবং করণীয়

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়া উচিত। চিকিৎসা শুরুর আগে সময়ক্ষেপণ করলে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি আরও বেড়ে যেতে পারে। যে কেউ যদি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ অনুভব করেন, তবে তাদের উচিত ৯১১ বা স্থানীয় জরুরি নম্বরে ফোন করা এবং সাহায্য চাওয়া।

সাধারণত, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো যায়। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার, এবং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।

কান (Ear) এর সমস্যা কেন হতে পারে আর এর সমাধান | 2024

Heart Attack এর চিকিৎসা :

হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) চিকিৎসা জরুরি এবং সময়মতো চিকিৎসা না হলে এটি জীবননাশক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা মূলত দুটি ধাপে বিভক্ত: জরুরি চিকিৎসা এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। এখানে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলো:

জরুরি চিকিৎসা

১. প্রাথমিক চিকিৎসা: হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ৯১১ বা স্থানীয় জরুরি নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইতে হবে। অপেক্ষার সময় রোগীকে শান্ত এবং স্থির রাখার চেষ্টা করা উচিত। যদি অ্যাসপিরিন পাওয়া যায় এবং রোগী এলার্জি না থাকেন, তাহলে একটি অ্যাসপিরিন চিবিয়ে খেতে দিতে পারেন। এটি রক্তের জমাট বাঁধা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

২. হাসপাতালে পৌঁছানো: জরুরি চিকিৎসা সেবাদানকারীরা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন এবং সেখানে আরও বিস্তারিত চিকিৎসা শুরু হবে। ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG) এবং রক্ত পরীক্ষা করা হবে যাতে হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করা যায়।

হাসপাতাল চিকিৎসা

৩. ওষুধ: হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়:

    – থ্রম্বোলাইটিক্স: এই ওষুধ রক্ত জমাট বাঁধা ভাঙতে সহায়ক।

    – অ্যান্টিপ্লেটলেট এজেন্টস: যেমন অ্যাসপিরিন এবং ক্লোপিডোগ্রেল, যা রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে।

    – বেটা ব্লকারস: হার্ট রেট কমাতে এবং হার্টের চাপ কমাতে সাহায্য করে।

    – ACE ইনহিবিটরস: রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদপিণ্ডের কাজ উন্নত করতে সহায়ক।

    – স্ট্যাটিনস: কোলেস্টেরল কমাতে ব্যবহৃত হয়।

৪. প্রসারণ চিকিৎসা (Reperfusion Therapy):

    – প্রাইমারি পেরকুটেনিয়াস করোনারি ইন্টারভেনশন (PCI): এটি একটি প্রসারণ পদ্ধতি যা ধমনীর ব্লকেজ দূর করতে এবং রক্ত সঞ্চালন পুনরায় চালু করতে সহায়ক। স্টেন্ট বসানোর মাধ্যমে ধমনী খুলে দেওয়া হয়।

    – কোরোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (CABG): এটি একটি সার্জারি পদ্ধতি যেখানে ধমনী বা শিরা ব্যবহার করে ব্লকেজ বাইপাস করা হয়।

দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা

৫. লাইফস্টাইল পরিবর্তন: রোগীকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করা হয়। এতে সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত। 

৬. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের নিয়মিত পরীক্ষা, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

৭. রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম: কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম রোগীর শারীরিক এবং মানসিক পুনরুদ্ধারে সহায়ক। এতে ব্যায়াম, শিক্ষা, এবং কাউন্সেলিং অন্তর্ভুক্ত থাকে।

৮. ওষুধ গ্রহণ: দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন, বেটা ব্লকার, ACE ইনহিবিটর, এবং স্ট্যাটিনস গ্রহণ করা জরুরি।

পরামর্শ

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে এবং পুনরাবৃত্তি রোধ করতে নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি মেনে চলা উচিত:

– সুষম খাদ্য: ফাইবার, ফলমূল, সবজি, এবং কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করতে হবে।

– নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করা উচিত।

– ধূমপান এবং মদ্যপান পরিহার: এগুলি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

– ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমাতে এবং স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখতে হবে।

– স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: মানসিক চাপ কমাতে যোগ, মেডিটেশন, বা অন্যান্য রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করতে হবে।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button