
Amyotrophic Lateral Sclerosis (ALS) বা স্নায়ুর ক্ষয় রোগ কেন হয় এবং এর প্রতিকার কি | 2025
Amyotrophic Lateral Sclerosis (ALS) হলো একটি জটিল স্নায়বিক রোগ, যেখানে মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের মোটর নিউরন ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। ফলে শরীরের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়, অসাড়তা আসে এবং ধীরে ধীরে চলাফেরা, কথা বলা, গিলতে পারা এমনকি শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। রোগটি সাধারণত ৪০–৭০ বছর বয়সে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে আগাতে থাকে। ALS-এর নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি এবং এটি এখনও নিরাময়যোগ্য নয়, তবে কিছু ওষুধ ও থেরাপি রোগের গতি কিছুটা ধীর করতে সাহায্য করে।
Amyotrophic Lateral Sclerosis (স্নায়ুর ক্ষয় রোগ) কেন হয়?
Amyotrophic Lateral Sclerosis (ALS) বা স্নায়ুর ক্ষয় রোগ একটি জটিল নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজঅর্ডার, যেখানে মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের মোটর নিউরনগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। মোটর নিউরন শরীরের পেশি নিয়ন্ত্রণ করে, তাই এদের ক্ষয় হলে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, সংকুচিত হয় এবং অবশেষে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
১. জেনেটিক কারণ (৫–১০% ক্ষেত্রে)
ALS-এর একটি ছোট অংশ বংশগতভাবে হয়, যাকে Familial ALS (FALS) বলা হয়। এতে সাধারণত SOD1, C9orf72, TARDBP ইত্যাদি জিনে পরিবর্তন (mutation) দেখা যায়। যদি পরিবারের একজন সদস্য ALS-এ আক্রান্ত হন, পরবর্তী প্রজন্মে ঝুঁকি বাড়ে।
২. স্পোরাডিক ALS (৯০–৯৫% ক্ষেত্রে)
অধিকাংশ ALS রোগী পরিবারে কোনো ইতিহাস ছাড়াই আক্রান্ত হন — যাকে Sporadic ALS বলা হয়। এর নির্দিষ্ট কারণ এখনো বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি জানেন না, তবে কিছু সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে:
- অক্সিডেটিভ স্ট্রেস: কোষের ভেতরে ক্ষতিকর অক্সিজেনের প্রভাব
- গ্লুটামেট টক্সিসিটি: একটি নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে নিউরনের ক্ষতি
- ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিকতা: শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুল করে স্নায়ু কোষ আক্রমণ করতে পারে
- পরিবেশগত কারণ: বিষাক্ত রাসায়নিক, ভারী ধাতু, পেস্টিসাইড ইত্যাদির দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শ
- বয়স ও লিঙ্গ: সাধারণত ৪০–৭০ বছর বয়সের মধ্যে পুরুষদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়
৩. অন্যান্য ঝুঁকি
- ধূমপান
- সামরিক বাহিনীতে কাজ করার ইতিহাস
- মাথায় আঘাতের পুরনো রেকর্ড
Wilson’s Disease বা শরীরে অতিরিক্ত কপার জমা রোগের কারণ এবং সমাধান | 2025
Amyotrophic Lateral Sclerosis (ALS) হলে জীবনযাপনে কী প্রভাব পড়ে?
Amyotrophic Lateral Sclerosis (ALS) এক মারাত্মক স্নায়বিক রোগ, যা ধীরে ধীরে শরীরের চলাফেরা, কথা বলা, খাওয়া এবং শ্বাস নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাগুলো কেড়ে নেয়। রোগ যতই অগ্রসর হয়, ততই রোগীর স্বাধীনতা কমে যায় এবং জীবনযাপন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে।
দৈনন্দিন কার্যক্রমে বাধা
ALS রোগে হাত-পা দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে হাঁটাচলা, কাপড় পরা, খাওয়া, এমনকি টয়লেট ব্যবহার করাও চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। অনেক সময় হুইলচেয়ার বা সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়। রোগীকে একসময় সম্পূর্ণরূপে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়।
যোগাযোগ ও খাদ্যগ্রহণ
ALS-এ মুখ ও গলার পেশিগুলোর ক্ষয় হলে কথা বলা অস্পষ্ট হয়ে যায়। অনেক রোগীকে কম্পিউটার-ভিত্তিক যোগাযোগ পদ্ধতির উপর নির্ভর করতে হয়। খাওয়া ও গিলতে সমস্যা হওয়ায় খাবার নল (feeding tube) ব্যবহার করতেও হয়।
মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
যদিও ALS শরীরকে দুর্বল করে, মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অক্ষুণ্ন থাকে। ফলে রোগীরা নিজেদের অবস্থার পূর্ণ সচেতন থাকে, যা মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক। অনেকেই হতাশা, ভয়, উদ্বেগ ও ডিপ্রেশনে ভোগেন।
পরিবার ও সাপোর্ট সিস্টেম
ALS শুধু রোগী নয়, তার পরিবারের জন্যও এক বিশাল মানসিক ও শারীরিক চাপ নিয়ে আসে। দিনের পর দিন সেবা দেওয়া, আর্থিক ব্যয় এবং মানসিক চাপ সব মিলিয়ে জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে।
Amyotrophic Lateral Sclerosis (ALS) (স্নায়ুর ক্ষয় রোগ) এর চিকিৎসা
ALS এখনো পর্যন্ত একটি নিরাময়যোগ্য রোগ নয়, তবে কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সাপোর্টিভ কেয়ারের মাধ্যমে রোগের গতি ধীর করা এবং জীবনমান উন্নত করা সম্ভব।
১. ওষুধ
Riluzole
- FDA অনুমোদিত প্রথম ওষুধ যা মোটর নিউরনের ক্ষয় কিছুটা ধীর করে।
- এটি গ্লুটামেট নামক নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা স্নায়ুর ক্ষতিতে ভূমিকা রাখে।
- কিছু রোগীর জীবনের সময়সীমা কয়েক মাস পর্যন্ত বাড়াতে পারে।
Edaravone (Radicava)
- স্নায়ু কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
- এটি ইনজেকশন বা ইনফিউশন আকারে দেওয়া হয়।
- কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ALS রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর।
২. সাপোর্টিভ থেরাপি
ফিজিওথেরাপি
- পেশি দুর্বলতা কমাতে সহায়তা করে
- ব্যালান্স ও গতি ধরে রাখতে সাহায্য করে
স্পিচ থেরাপি
- কথা বলার সমস্যা দেখা দিলে যোগাযোগের বিকল্প পদ্ধতি শেখায়
অকুপেশনাল থেরাপি
- দৈনন্দিন কাজ সহজ করতে সহায়ক যন্ত্র ও কৌশল শেখায়
শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়তা (Ventilatory Support)
- রোগের শেষ দিকে শ্বাস নেওয়া কঠিন হলে BiPAP বা ট্র্যাচিওস্টমি ব্যবহৃত হয়
৩. পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থা
- খাওয়া ও গিলতে অসুবিধা হলে ফিডিং টিউব ব্যবহার করা হয়
- পুষ্টিকর খাবার ও সঠিক হাইড্রেশন রোগীর শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে
৪. মানসিক সাপোর্ট
- রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নে কাউন্সেলিং, সাপোর্ট গ্রুপ, এবং পরিবার/বন্ধুর সহানুভূতি অত্যন্ত জরুরি
মতামত
ALS একটি কঠিন ও অপ্রতিরোধ্য রোগ হলেও, যথাযথ চিকিৎসা, মানসিক সাপোর্ট এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় রোগীরা সম্মানের সঙ্গে জীবন কাটাতে পারেন। এই রোগ শরীরকে ধীরে ধীরে দুর্বল করলেও, রোগীর চিন্তাশক্তি সচল থাকে, যা আরও কঠিন মানসিক চাপ তৈরি করে। তাই শুধু চিকিৎসা নয়, পরিবারের সহানুভূতি, সমাজের বোঝাপড়া ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতে গবেষণার মাধ্যমে নতুন ওষুধ ও প্রতিকার আবিষ্কারের আশাও রয়েছে।