
Marfan Syndrome বা যোজক কলার জিনগত রোগ হওয়ার কারণ এবং এর সমাধান | 2025
Marfan Syndrome একটি জেনেটিক রোগ, যা শরীরের যোজক কলা (connective tissue)-কে প্রভাবিত করে। এই কলা হাড়, চোখ, হৃদপিণ্ড, রক্তনালী, ত্বকসহ শরীরের অনেক অংশকে সহায়তা ও স্থিতিশীলতা দেয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণত লম্বা হাত-পা, সরু আঙুল, বাঁকা মেরুদণ্ড, চোখে সমস্যা ও হৃদযন্ত্রে জটিলতা দেখা যায়। রোগটি FBN1 জিনের ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে, যা fibrillin-1 প্রোটিন তৈরি করে। এটি অটোসোমাল ডমিনেন্টভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে হয়। সঠিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে রোগী দীর্ঘ ও কার্যকর জীবনযাপন করতে পারে।
Marfan Syndrome কেন হয়?
Marfan Syndrome হলো একটি বংশগত জিনগত রোগ, যা মূলত শরীরের যোজক কলা (connective tissue)-কে প্রভাবিত করে। যোজক কলা শরীরের হাড়, রক্তনালী, চোখ, ত্বক ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
FBN1 জিনের ত্রুটি
Marfan Syndrome সাধারণত FBN1 নামক জিনে মিউটেশনের কারণে হয়। এই জিনটি chromosome 15-এ থাকে এবং এটি fibrillin-1 নামক একটি প্রোটিন তৈরি করে, যা শরীরের টিস্যুকে দৃঢ় ও স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
যখন FBN1 জিনে ত্রুটি থাকে, তখন fibrillin-1 প্রোটিন সঠিকভাবে তৈরি হয় না বা দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে elastin নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা শরীরের যোজক কলা দুর্বল করে তোলে।
ফলে রক্তনালীর দেয়াল পাতলা হয়ে যেতে পারে, চোখের লেন্স সরে যেতে পারে, হাড় অস্বাভাবিকভাবে লম্বা বা বাঁকা হতে পারে এবং হৃদপিণ্ডের ভালভে সমস্যা দেখা দেয়।
উত্তরাধিকার ও হঠাৎ মিউটেশন
এই রোগ সাধারণত অটোসোমাল ডমিনেন্ট প্যাটার্নে উত্তরাধিকারসূত্রে হয়। অর্থাৎ, যদি বাবা বা মা–এর মধ্যে একজনের এই জিনে ত্রুটি থাকে, তাহলে সন্তানদের ৫০% সম্ভাবনায় এটি হতে পারে।
তবে প্রায় ২৫% ক্ষেত্রে, কোনো পারিবারিক ইতিহাস ছাড়াই spontaneous mutation এর মাধ্যমে রোগটি প্রথমবার দেখা যায়।
Duchenne Muscular Dystrophy (DMD) বা শিশুদের পেশী ক্ষয় রোগ এর কারণ এবং সমাধান | 2025
Marfan Syndrome হলে জীবনযাপন কেমন হয়?
Marfan Syndrome একটি আজীবন বহনযোগ্য জেনেটিক রোগ, যা শরীরের যোজক কলার দুর্বলতার কারণে হাড়, চোখ, হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ধীরে ধীরে প্রভাব ফেলে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাপন অনেক ক্ষেত্রেই সাবধানতা, চিকিৎসা ও সীমাবদ্ধতার মাঝে কাটে।
দৈহিক ও শারীরিক প্রভাব
Marfan আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণত হাত-পা লম্বা, আঙুল সরু ও মেরুদণ্ড বাঁকা থাকে।
দ্রুত হাঁটাচলা, ভারী কাজ, খেলাধুলা—এইসব কাজ করতে অসুবিধা হয়।
অনেক সময় চোখে সমস্যা দেখা দেয়, যেমন লেন্স ডিসলোকেশন, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা ইত্যাদি। চোখে চশমা বা লেন্স ব্যবহার করতে হয়।
হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর সমস্যা
Marfan রোগীদের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীতে জটিলতা, যেমন অর্টিক অ্যানিউরিজম বা হৃদযন্ত্রের ভালভে ত্রুটি।
তাই রোগীদের নিয়মিত কার্ডিওলজিস্ট-এর ফলোআপ দরকার হয়। অনেক সময় অস্ত্রোপচারও করতে হতে পারে।
জীবনযাত্রা ও মানসিক প্রভাব
এই রোগের কারণে অনেকেই মানসিক চাপে ভোগে—বিশেষ করে যারা ছোটবেলা থেকেই নিজের গড়ন বা সক্ষমতা নিয়ে সচেতন হয়ে পড়ে।
স্কুল-কলেজ বা পেশাগত জীবনে সীমাবদ্ধতা ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা রোগীর আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে।
তবে চিকিৎসা, থেরাপি, সচেতনতা এবং পরিবারের সহায়তায় একজন Marfan রোগী দীর্ঘ ও অর্থবহ জীবন কাটাতে পারেন।
Marfan Syndrome এর চিকিৎসা
Marfan Syndrome একটি জেনেটিক ও আজীবন বহনযোগ্য রোগ, যার নির্দিষ্ট কোনো নিরাময় নেই। তবে চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো রোগের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে রাখা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি প্রতিরোধ এবং রোগীর জীবনমান উন্নত করা।
১. হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর যত্ন
Marfan রোগীদের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো অর্টিক অ্যানিউরিজম (aorta বিস্তার) এবং হৃদযন্ত্রের ভালভের সমস্যা।
তাই নিয়মিত ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram), CT scan, কিংবা MRI করে হৃদযন্ত্র ও অর্টার পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ওষুধ:
- বিটা ব্লকার (Beta-blockers) – যেমন atenolol, হৃদস্পন্দন কমিয়ে চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- Angiotensin receptor blockers (ARBs) – যেমন losartan, অর্টার বিস্তার রোধে কার্যকর।
Note: অর্টা খুব বেশি বড় হলে বা ভালভে জটিলতা থাকলে সার্জারি (heart valve repair বা aortic graft) করতে হতে পারে।
২. চোখের চিকিৎসা
- লেন্স ডিসলোকেশন, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা, গ্লুকোমা বা ক্যাটারেক্ট হলে চশমা, কন্টাক্ট লেন্স, বা চোখের অস্ত্রোপচার করা হয়।
৩. হাড় ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যত্ন
- স্কোলিওসিস বা মেরুদণ্ডের বাঁক ঠিক রাখতে ব্রেস বা কখনো সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
- অস্বাভাবিক লম্বা অঙ্গ ও জয়েন্টের সমস্যা হলে ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়াম কাজে আসে।
৪. নিয়মিত ফলোআপ ও পরামর্শ
- একজন কার্ডিওলজিস্ট, অর্কোপেডিক সার্জন, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও জিন বিশেষজ্ঞ–এর যৌথ তত্ত্বাবধানে চলা দরকার।
- বংশগত ঝুঁকি নির্ধারণে জিন পরামর্শ (genetic counseling) সহায়ক।
মতামত
Marfan Syndrome একটি জটিল কিন্তু নিয়ন্ত্রিতযোগ্য জিনগত রোগ। এটি যেহেতু সরাসরি যোজক কলার ওপর প্রভাব ফেলে, তাই হৃদযন্ত্র থেকে শুরু করে হাড় ও চোখ—সবকিছুর ওপর এর প্রভাব পড়ে। তবে আধুনিক চিকিৎসা, নিয়মিত ফলোআপ এবং সঠিক জীবনযাত্রা মেনে চললে একজন Marfan রোগী স্বাভাবিক ও দীর্ঘ জীবন যাপন করতে পারেন। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা, সময়মতো রোগ শনাক্তকরণ, এবং পরিবার ও সমাজের সহানুভূতিশীল ভূমিকা।