
Creutzfeldt–Jakob Disease (CJD) বা মস্তিষ্ক ধ্বংসকারী প্রায়ন রোগ কেন হয়? এবং সমাধান | 2025
Creutzfeldt–Jakob Disease (CJD) হলো একটি বিরল, দ্রুত অগ্রসরমান ও মারাত্মক নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, যা মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে ফেলে। এটি একটি প্রায়ন (prion) নামক বিকৃত প্রোটিনের কারণে হয়, যা সুস্থ প্রোটিনকে ক্ষতিকর রূপে রূপান্তরিত করে। ফলে স্মৃতি হ্রাস, বিভ্রান্তি, আচরণগত পরিবর্তন, চলাফেরার সমস্যা এবং দ্রুত মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
সাধারণত ৬০ বছরের বেশি বয়সে লক্ষণ শুরু হয় এবং রোগী ১ বছরের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। এটি বংশগত, সংক্রমিত বা নিজে থেকেই (sporadic) হতে পারে।
CJD বা Creutzfeldt–Jakob Disease কেন হয়?
Creutzfeldt–Jakob Disease (CJD) একটি বিরল কিন্তু অত্যন্ত প্রাণঘাতী নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, যা মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে ফেলে। এই রোগের প্রধান কারণ হলো প্রায়ন (prion) নামক একটি বিকৃত প্রোটিন।
প্রায়ন কী?
প্রায়ন হলো একটি অস্বাভাবিক গঠনের প্রোটিন, যা সাধারণত মস্তিষ্কে পাওয়া যায়। এই বিকৃত প্রোটিন অন্য স্বাভাবিক প্রোটিনকে নিজের মতো বিকৃত করে তোলে। এর ফলে মস্তিষ্কে গর্তের মতো ক্ষত সৃষ্টি হয়, যা “স্পঞ্জিফর্ম এনসেফালোপ্যাথি” নামে পরিচিত। এই কোষ ধ্বংসের প্রক্রিয়া অপ্রতিরোধ্য এবং দ্রুত গতির।
CJD-এর প্রধান ধরনগুলো:
১. Sporadic CJD (sCJD) –
প্রায় ৮৫% ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেখানে কোনো পূর্ব ইতিহাস বা সংক্রমণের প্রমাণ থাকে না। নিজে থেকেই প্রায়ন গঠিত হয়।
২. Hereditary CJD (gCJD) –
প্রায় ১০-১৫% ক্ষেত্রে, PRNP জিনে মিউটেশন থাকার কারণে এটি পরিবারে উত্তরাধিকারসূত্রে ঘটে।
৩. Acquired CJD (iCJD or vCJD) –
দুর্লভ হলেও এটি সংক্রমিত টিস্যু, অস্ত্রোপচার, দানকৃত কর্নিয়া বা দূষিত চিকিৎসা যন্ত্র থেকে হতে পারে।
Variant CJD (vCJD) হচ্ছে “ম্যাড কাউ ডিজিজ” থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়া এক বিশেষ ধরন।
সংক্রমণ কীভাবে হয় না?
CJD কাশি, হাঁচি বা স্পর্শে ছড়ায় না। এটি রক্ত বা সংক্রমিত স্নায়ুতন্তুর সরাসরি সংস্পর্শ ছাড়া ছড়ায় না।
Tay-Sachs Disease বা স্নায়ুর বিরল জিনগত রোগ কেন এত দুর্যোগ | 2025
Creutzfeldt–Jakob Disease (CJD) হলে জীবনযাপন কেমন হয়?
Creutzfeldt–Jakob Disease (CJD) হলো এমন একটি বিরল নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, যা খুব দ্রুত মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে রোগীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা দ্রুত কমে যায়, এবং এক বছরের মধ্যেই অধিকাংশ রোগী মৃত্যুবরণ করেন। তাই এই রোগে জীবনযাপন হয় খুব কঠিন ও সীমাবদ্ধ।
মানসিক ও স্নায়বিক পরিবর্তন
CJD আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে স্মৃতিভ্রংশ, বিভ্রান্তি, অবসাদ বা আচরণগত পরিবর্তন অনুভব করেন। দ্রুতই:
- চিন্তাভাবনার ক্ষমতা হ্রাস পায়
- পারিপার্শ্বিকতা বোঝার শক্তি নষ্ট হয়
- রোগী আত্মীয়দের চিনতে পারেন না
- মাঝে মাঝে ভয় বা ভ্রান্ত ধারণা (delusion) দেখা দেয়
শারীরিক দুর্বলতা
- হাঁটাচলা, দাঁড়ানো বা বসার ক্ষমতা দ্রুত হারিয়ে যায়
- পেশি কাঁপুনি (myoclonus), ভারসাম্য হারানো ও স্পাস্টিসিটি দেখা যায়
- রোগী বিছানায় পড়ে যান এবং পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন
দৈনন্দিন যত্ন ও সহায়তা
রোগটি এত দ্রুত অগ্রসর হয় যে, পরিবারের পক্ষেও মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকসময়:
- খাদ্যগ্রহণে সহায়তা প্রয়োজন
- প্রস্রাব-পায়খানা নিয়ন্ত্রণ হারায়
- কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়
- কৃত্রিম খাদ্য বা অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে
CJD রোগের চিকিৎসা
Creutzfeldt–Jakob Disease (CJD) একটি বিরল ও দ্রুতগতিতে অগ্রসরমান নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, যার এখনও পর্যন্ত কোনো নিরাময় বা নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। কারণ এটি প্রায়ন (prion) নামক একটি বিকৃত প্রোটিন দ্বারা ঘটে, যা সাধারণ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো ধ্বংস করা যায় না।
তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমর্থনমূলক (supportive) ও উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা রোগীর কষ্ট কমাতে পারে।
১. স্নায়বিক উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ
- রোগের অগ্রগতি ঠেকানো সম্ভব না হলেও, খিঁচুনি (seizures), পেশির ঝাঁকুনি (myoclonus) এবং আচরণগত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে antiepileptic ও antipsychotic ওষুধ দেওয়া হয়।
- যেমন: Clonazepam, Valproate, Haloperidol ইত্যাদি।
২. প্যালিয়েটিভ কেয়ার
- CJD রোগীর শেষ সময়টা খুব কষ্টদায়ক হতে পারে। তাই প্যালিয়েটিভ কেয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
- এর মাধ্যমে রোগীর ব্যথা, অস্বস্তি, শ্বাসকষ্ট, খিদে না পাওয়া ও ঘুমহীনতা কমানো হয়।
লক্ষ্য: রোগী যেন শেষ সময়টা যতটা সম্ভব শান্তিপূর্ণ ও যন্ত্রণাহীনভাবে কাটাতে পারেন।
৩. পরিবার ও পরিচর্যাকারীর সহায়তা
- রোগীর পরিবার ও সেবাদাতারা মানসিকভাবে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকেন। তাই কাউন্সেলিং ও সাপোর্ট গ্রুপ সহায়ক হতে পারে।
- রোগীর জন্য প্রয়োজন হয়:
- নিয়মিত বিছানা পরিষ্কার রাখা
- খাবার খাওয়ানো
- শ্বাসযন্ত্রের যত্ন
- সংক্রমণ প্রতিরোধ
৪. গবেষণা ও ভবিষ্যতের আশার আলো
বর্তমানে CJD-র জন্য জিন থেরাপি বা প্রায়ন-ব্লকার ওষুধ নিয়ে গবেষণা চলছে, তবে এখনো কোনো কার্যকর চিকিৎসা বাজারে আসেনি।
মতামত
CJD এমন এক রোগ, যা দ্রুত মস্তিষ্ক ধ্বংস করে রোগীকে পুরোপুরি নির্ভরশীল করে তোলে। এর কোনো নিরাময় নেই, যা এই রোগকে আরও ভয়াবহ করে তোলে। তবুও সহানুভূতিশীল চিকিৎসা, পরিবারের ভালোবাসা ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার একজন রোগীর শেষ দিনগুলোকে কিছুটা হলেও শান্ত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা যদি ভবিষ্যতে কার্যকর প্রায়ন-নিরোধক ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেন, তবে এই রোগে নতুন আশার আলো দেখা যাবে। এখন দরকার সচেতনতা, দ্রুত শনাক্তকরণ ও সহমর্মিতাভিত্তিক চিকিৎসা।