Duchenne Muscular Dystrophy (DMD) বা শিশুদের পেশী ক্ষয় রোগ এর কারণ এবং সমাধান | 2025

Duchenne Muscular Dystrophy (DMD) একটি বংশগত ও বিরল স্নায়ুবিক রোগ, যা মূলত ছোট ছেলেশিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগে ডিস্ট্রোফিন (Dystrophin) নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের অভাবে পেশি ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে ও দুর্বল হয়ে যায়। সাধারণত ৩–৫ বছর বয়স থেকে লক্ষণ দেখা যায়—যেমন হাঁটাচলায় সমস্যা, পড়ে যাওয়া, ও দৌড়াতে না পারা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুটি হুইলচেয়ারে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং ২০ বছর বয়সের আগেই গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে রোগটি নিরাময়যোগ্য না হলেও চিকিৎসা ও থেরাপি দিয়ে জীবনমান কিছুটা উন্নত করা যায়।

Duchenne Muscular Dystrophy (DMD) কেন হয়?

Duchenne Muscular Dystrophy (DMD) একটি জেনেটিক বা বংশগত রোগ, যা ঘটে শরীরের একটি বিশেষ জিনের (gene) পরিবর্তনের কারণে। এই রোগ মূলত ছেলেশিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং এটি ধীরে ধীরে তাদের পেশি দুর্বল ও ক্ষয়প্রাপ্ত করে তোলে।

জিনগত কারণ

DMD রোগের মূল কারণ হলো DMD নামক জিনে ত্রুটি বা মিউটেশন, যা X ক্রোমোজোমে অবস্থান করে। এই জিনের কাজ হলো ডিস্ট্রোফিন (Dystrophin) নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করা।
ডিস্ট্রোফিন পেশির কোষকে শক্তিশালী রাখে এবং চলাফেরা করার সময় কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

যখন এই জিনে ত্রুটি থাকে, তখন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিস্ট্রোফিন তৈরি হয় না বা একেবারেই হয় না। এর ফলে পেশির কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে, সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে।

কেন মূলত ছেলেরা আক্রান্ত হয়?

এই রোগটি X-লিঙ্কড রিসেসিভ প্যাটার্নে উত্তরাধিকারসূত্রে হয়। ছেলেদের একটাই X ক্রোমোজোম থাকে, তাই যদি ওই একটি X ক্রোমোজোমে ত্রুটিযুক্ত DMD জিন থাকে, তাহলে সে DMD রোগে আক্রান্ত হয়।
মেয়েদের দুইটি X ক্রোমোজোম থাকায় তারা সাধারণত এই রোগের বাহক (carrier) হয়, তবে খুব বিরল ক্ষেত্রে তারাও আক্রান্ত হতে পারে।

পরিবার থেকে উত্তরাধিকার

DMD রোগটি সাধারণত মায়ের দিক থেকে উত্তরাধিকার পায়। তবে প্রায় ৩০% ক্ষেত্রে এটি spontaneous mutation এর ফলেও হতে পারে, অর্থাৎ পারিবারিক ইতিহাস ছাড়াও হতে পারে।

Gaucher’s Disease বা চর্বি কোষ জমে যাওয়ার বিরল রোগ কেন হয় এবং প্রতিকারক | 2025

DMD রোগ হলে শিশুদের সামলে রাখা কতটা কঠিন?

Duchenne Muscular Dystrophy (DMD) একটি কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি জেনেটিক রোগ, যা ধীরে ধীরে শিশুদের পেশি দুর্বল করে তোলে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের সামলে রাখা কেবল শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিকভাবেও অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।

শারীরিক সীমাবদ্ধতা

DMD রোগীরা প্রাথমিকভাবে হাঁটতে ও দৌড়াতে সমস্যা অনুভব করে। কিছুদিন পরেই তারা নিজে থেকে উঠতে, সিঁড়ি ভাঙতে, এমনকি সোজা দাঁড়াতে পারেও না। ১০–১২ বছর বয়সের মধ্যেই অনেক শিশু হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।
এই অবস্থায় তাদের প্রতিদিনের কাজে যেমন খাওয়া, গোসল, স্কুলে যাওয়া—সবকিছুতে অভিভাবকের পূর্ণ সহায়তা লাগে।

মানসিক ও আবেগগত দিক

শিশুরা যখন দেখে তাদের সহপাঠীরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে, তখন তারা নিজের দুর্বলতা বুঝতে শুরু করে এবং অনেক সময় হতাশা, আত্মগ্লানি বা রাগ কাজ করে। অনেকেই চুপচাপ হয়ে যায়, আবার কেউ কেউ রাগী বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়।

অভিভাবকের দায়িত্ব

একজন অভিভাবকের জন্য এই শিশুকে সামলে রাখা শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে বিশাল চ্যালেঞ্জ
প্রতিনিয়ত চিকিৎসা, থেরাপি, পুষ্টিকর খাবার, স্কুলিং, ও মানসিক সমর্থন দেওয়া লাগে। অনেক সময় পরিবারের একজন সদস্যকে সম্পূর্ণভাবে শিশুর যত্নে নিয়োজিত থাকতে হয়।

থেরাপি ও সহায়তা

যথাযথ থেরাপি, পরামর্শদাতা, স্কুল শিক্ষক ও ফিজিওথেরাপিস্টদের সহায়তা এই শিশুদের কিছুটা স্বাভাবিক রাখলেও পুরো বিষয়টি দীর্ঘ এবং অনেক ধৈর্যের।

Duchenne Muscular Dystrophy (DMD) এর চিকিৎসা

১. ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা

Corticosteroids (যেমন Prednisone, Deflazacort):
এই ওষুধগুলো পেশির ক্ষয় কমাতে ও কিছুটা শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। তবে এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (মুটিয়ে যাওয়া, হাড় দুর্বলতা) নিয়মিত নজরদারিতে রাখতে হয়।

Exon-skipping therapy:
নতুন ধরনের জেনেটিক থেরাপি যা নির্দিষ্ট মিউটেশন থাকলে কাজ করে। যেমন: eteplirsen, golodirsen


২. ফিজিওথেরাপি ও পেশী যত্ন

  • প্রতিদিন নিয়মিত ফিজিওথেরাপি পেশির নমনীয়তা বজায় রাখে ও চলাফেরার ক্ষমতা কিছুটা ধরে রাখে।
  • contracture বা পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া কমানোর জন্য স্ট্রেচিং, ব্রেস বা স্প্লিন্ট ব্যবহার করা হয়।

৩. Gene Therapy (গবেষণাধীন)

বর্তমানে জিন থেরাপি নিয়ে গবেষণা চলছে, যেখানে ত্রুটিযুক্ত DMD জিনকে সংশোধন করে ডিস্ট্রোফিন প্রোটিন উৎপাদন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো।

৪. হার্ট ও শ্বাসতন্ত্রের যত্ন

  • DMD রোগে হৃদপিণ্ড ও শ্বাসযন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই নিয়মিত কার্ডিওলজিস্ট ও পালমোনোলজিস্ট এর তত্ত্বাবধান জরুরি।
  • মাঝে মাঝে ভেন্টিলেটর বা রেসপিরেটরি সাপোর্টের প্রয়োজন হয়।

মতামত

Duchenne Muscular Dystrophy একটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা এবং জীবনকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা জটিল রোগ। এটি শিশুর শারীরিক সক্ষমতা কেড়ে নেয়, তবে আধুনিক চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি ও পরিবারভিত্তিক সাপোর্টে শিশুরা কিছুটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। এই রোগ নিয়ে সচেতনতা, মানসিক সহায়তা ও চিকিৎসা গবেষণা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতের জিন থেরাপি হয়তো একদিন এই রোগের স্থায়ী সমাধান এনে দিতে পারবে এই আশাতেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button