জন্ডিস (Jaundice) এর লক্ষণ এবং চিকিৎসা | 2024

জন্ডিস (Jaundice) হল একটি চিকিৎসাগত অবস্থা যেখানে শরীরের ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়। এটি সাধারণত বিলিরুবিন নামক পিগমেন্টের অতিরিক্ত জমার কারণে ঘটে। বিলিরুবিন রক্তে উপস্থিত একটি উপাদান, যা লিভারের মাধ্যমে প্রস্রাবে নির্গত হয়। লিভারের অসামর্থ্য বা ব্লকেজের কারণে বিলিরুবিন শরীরে জমা হয়, ফলে জন্ডিস হয়। এটি লিভারের রোগ, পিত্তনালীর সমস্যা বা রক্তের রোগের লক্ষণ হতে পারে। জন্ডিসের অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, পেট ব্যথা, মূত্রের রঙ গাঢ় হওয়া, এবং চামড়ার চুলকানি। চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণ ও তীব্রতার উপর।

জন্ডিস (Jaundice) এর লক্ষণ :

জন্ডিস (Jaundice) হলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দিতে পারে:

1. ত্বক ও চোখের রং পরিবর্তন:

   – ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, যা জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ।

2. ক্লান্তি ও দুর্বলতা:

   – শরীর অত্যন্ত ক্লান্ত ও দুর্বল অনুভব করে।

3. পেট ব্যথা:

   – বিশেষ করে ডান পাঁজরের নিচে পেটে ব্যথা হতে পারে।

4. বমি ও বমি বমি ভাব:

   – খাবারে অরুচি, বমি ও বমি বমি ভাব হতে পারে।

5. মূত্র ও মলের রং পরিবর্তন:

   – মূত্রের রং গাঢ় হলুদ বা বাদামী হতে পারে এবং মলের রং ফ্যাকাশে বা সাদা হতে পারে।

6. চামড়ার চুলকানি:

   – তীব্র চুলকানি হতে পারে, যা অনেক সময় অস্বস্তিকর হয়।

7. ওজন হ্রাস:

   – খাদ্যে অরুচির কারণে ওজন কমতে পারে।

8. মুখের ভিতর ও জিহ্বায় কটু স্বাদ:

   – মুখে কটু বা তিক্ত স্বাদ অনুভব হতে পারে।

এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ জন্ডিসের (Jaundice) কারণ ও তীব্রতার উপর ভিত্তি করে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

সাপ (Snake) কামড়ালে বিষ এর প্রভাব কমানোর জন্য কি করনীয় | 2024

জন্ডিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা :

জন্ডিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা বা ঘরোয়া প্রতিকার কিছুটা উপশম দিতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকার যা জন্ডিস উপশমে সহায়ক হতে পারে:

1. হাইড্রেশন:

– প্রচুর পানি পান করুন। পানি লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে।

2. আহার:

– স্বাস্থ্যকর ও সুষম আহার করুন। ফলমূল, শাকসবজি, এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়।

– চিনি, তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।

– তাজা ফলের রস যেমন পেঁপে, আঙুর, এবং গাজরের রস পান করতে পারেন।

3. লেবুর রস:

– লেবুর রস লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।

4. মেথি বীজ:

– মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করুন। এটি লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।

5. আয়ুর্বেদিক গাছপালা:

– মঞ্জিষ্ঠা, ভৃঙ্গরাজ, এবং পিপলির মতো আয়ুর্বেদিক গাছপালা লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে। তবে এসব ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

6. বিশ্রাম:

– প্রচুর বিশ্রাম নিন। বিশ্রাম শরীরকে সুস্থ হতে সাহায্য করে এবং লিভারের উপর চাপ কমায়।

7. আলু বুখারা:

   – আলু বুখারার রস পান করতে পারেন, এটি লিভারকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।

8. দই ও ছানা:

 – দই ও ছানা খাওয়া যেতে পারে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং লিভারের কাজকে সহজতর করে।

যদিও এই প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলি উপশম দিতে পারে, তবে জন্ডিসের সঠিক কারণ নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। লিভারের যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে ভুলবেন না।

জন্ডিস হলে কি ডাক্তার এর ভূমিকা :

জন্ডিস হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জন্ডিস (Jaundice) সাধারণত লিভারের সমস্যার লক্ষণ এবং এটি বিভিন্ন গুরুতর অসুস্থতার ইঙ্গিত হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ কেন জরুরি তা উল্লেখ করা হলো:

কারণ নির্ণয়:

জন্ডিসের সঠিক কারণ নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ। লিভার, পিত্তনালী, বা রক্তের অসুখের কারণে জন্ডিস হতে পারে।

সঠিকচিকিৎসা:

চিকিৎসক জন্ডিসের কারণ এবং তীব্রতা অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করতে পারেন। এটি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ওষুধ, ডায়েট পরিবর্তন, বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি।

পরীক্ষা:

রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান বা অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে লিভারের অবস্থা নির্ণয় করা হয়।

জটিলতাপ্রতিরোধ:

দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা জন্ডিসের জটিলতা যেমন লিভার ফেলিওর, প্যানক্রিয়াটাইটিস বা পিত্তনালী ব্লকেজ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

লিভারফাংশনমূল্যায়ন:

লিভারের কার্যকারিতা মূল্যায়ন এবং উন্নতি নিরীক্ষণ করতে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

পর্যবেক্ষণ:

জন্ডিসের লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণে রাখতে এবং চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করতে চিকিৎসক সহায়ক হতে পারেন।

বিশেষজ্ঞেরপরামর্শ:

গুরুতর ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট বা হেপাটোলজিস্টের মতো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি হতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই, জন্ডিস (Jaundice) হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button