
Pimple কেন হয়? এবং এটি ঠিক করার ঘরোয়া উপায় | 2024
পিম্পল (Pimple) সাধারণত তৈলাক্ত গ্রন্থি থেকে তেল এবং মৃত কোষ জমা হয়ে ত্বকের রন্ধ্রে আটকে যায়। এটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। হরমোনের পরিবর্তন, ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্ট্রেস এবং অপর্যাপ্ত ত্বক পরিচর্যা পিম্পলের কারণ। নিয়মিত মুখ পরিষ্কার রাখা, সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ত্বকের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
Pimple কেন হয় :
পিম্পল (Pimple) বা ব্রণ হচ্ছে এক ধরনের সাধারণ ত্বকের সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি মূলত তখনই ঘটে যখন ত্বকের রন্ধ্রে তেল, মৃত কোষ, এবং ব্যাকটেরিয়া জমা হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এখানে পিম্পল কেন হয় তার কারণগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. হরমোনাল পরিবর্তন
পিম্পলের (Pimple) প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো হরমোনাল পরিবর্তন। বয়ঃসন্ধিকালে, শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা ত্বকের তেল গ্রন্থিগুলিকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করতে উদ্দীপিত করে। এই অতিরিক্ত তেল রন্ধ্রগুলিকে আটকে রেখে পিম্পলের সৃষ্টি করে। এছাড়াও, মেয়েদের ক্ষেত্রে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল, গর্ভাবস্থা, এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহারের কারণে হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে, যা পিম্পলের কারণ হতে পারে।
২. ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা
যারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তেলযুক্ত ত্বকের অধিকারী, তাদের পিম্পল (Pimple) হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা রন্ধ্রে জমা হয়ে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, যা প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং পিম্পলের জন্ম দেয়।
৩. মৃত কোষ জমা
ত্বকের প্রতিনিয়ত নতুন কোষ তৈরি হয় এবং পুরানো কোষগুলি মরে যায়। যখন এই মৃত কোষগুলি ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে ঠিকমত অপসারণ হয় না, তখন তারা রন্ধ্রগুলিকে আটকে রাখতে পারে এবং পিম্পলের (Pimple) সৃষ্টি করতে পারে।
৪. ব্যাকটেরিয়া
ত্বকের পৃষ্ঠে প্রোপিওনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনেস (Propionibacterium acnes) নামক ব্যাকটেরিয়া সাধারণত উপস্থিত থাকে। যখন রন্ধ্রগুলি তেল এবং মৃত কোষ দিয়ে আটকে যায়, তখন এই ব্যাকটেরিয়া রন্ধ্রগুলিতে বেড়ে উঠে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং পিম্পল তৈরি করে।
৫. খাদ্যাভ্যাস
খাদ্যাভ্যাসের সাথে পিম্পলের (Pimple) একটি সম্পর্ক রয়েছে। উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার, যেমন চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য পিম্পলের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত চকলেট এবং ভাজা খাবার খাওয়া পিম্পল বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
৬. স্ট্রেস
স্ট্রেস শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্সকে প্রভাবিত করে, যা ত্বকের তেল উৎপাদন বাড়াতে পারে। এর ফলে রন্ধ্রগুলি আটকে যায় এবং পিম্পল সৃষ্টি হয়।
৭. অপর্যাপ্ত ত্বক পরিচর্যা
সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার না করলে তেল, ময়লা, এবং মৃত কোষ জমা হয়ে রন্ধ্রগুলিকে আটকে দিতে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহার এবং মেকআপ ঠিকমত পরিষ্কার না করাও পিম্পলের কারণ হতে পারে।
৮. জেনেটিক কারণ
পরিবারে যদি কারো পিম্পল হওয়ার প্রবণতা থাকে, তাহলে জেনেটিক কারণেও পিম্পল হতে পারে। জেনেটিক কারণে ত্বকের গঠন, তেল উৎপাদনের মাত্রা, এবং রন্ধ্রগুলির আকার পরিবর্তিত হতে পারে যা পিম্পলের সম্ভাবনা বাড়ায়।
৯. আবহাওয়া
আবহাওয়া পিম্পলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ত্বকের তৈলাক্ততা বৃদ্ধি পায়, যা রন্ধ্রগুলিকে আটকে রাখতে সহায়ক। আবার শীতল আবহাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যা ত্বকের মৃত কোষ জমা হওয়ার প্রবণতা বাড়ায় এবং পিম্পলের সৃষ্টি করতে পারে।
১০. অ্যালার্জি এবং সংবেদনশীলতা
কিছু মানুষের ত্বক বিভিন্ন প্রসাধনী, ওষুধ, বা খাবারের উপাদানের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যা ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং পিম্পলের কারণ হতে পারে।
প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা
পিম্পল প্রতিরোধে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৃদু ক্লেনজার দিয়ে দিনে দুইবার মুখ ধোয়া এবং অতিরিক্ত তেলযুক্ত প্রসাধনী এড়িয়ে চলা উচিত। পিম্পল হলে তা খোঁচানো বা চাপ দেওয়া উচিত নয়, কারণ এতে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ পিম্পল প্রতিরোধে সহায়ক। গুরুতর ক্ষেত্রে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ বা চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
পিম্পল একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সঠিক ত্বক পরিচর্যা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
Asthma বা অ্যাজমা কেন হয় এবং এর প্রতিকার কি | 2024
Pimple ঠিক করার ঘরোয়া উপায় :
পিম্পল বা ব্রণ দূর করার জন্য অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে, যার মধ্যে কিছু বাড়িতেই করা যায় এবং কিছু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। এখানে কিছু কার্যকর পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
১. নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখা
ত্বক পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে ও রাতে মৃদু ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ত্বক থেকে তেল ও ময়লা অপসারণ করুন।
২. এক্সফোলিয়েশন
সপ্তাহে একবার ত্বকের মৃত কোষ দূর করার জন্য স্ক্রাব ব্যবহার করুন। এটি রন্ধ্র খুলে দেয় এবং নতুন কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৩. অ্যান্টি-অ্যাকনে প্রোডাক্ট
যেসব প্রোডাক্টে স্যালিসিলিক অ্যাসিড, বেনজয়েল পারক্সাইড, বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড রয়েছে, সেগুলি ব্যবহার করতে পারেন। এগুলি ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
৪. মুখে হাত দেওয়া এড়িয়ে চলা
মুখে হাত দেওয়া বা পিম্পল (Pimple) খোঁচানো উচিত নয়। এতে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যেতে পারে এবং প্রদাহ বাড়তে পারে।
৫. পর্যাপ্ত পানি পান করা
পর্যাপ্ত পানি পান করা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়ক।
৬. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। শাকসবজি, ফলমূল, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। চিনি, ভাজা খাবার, এবং দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলা ভালো।
৭. পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, বা শখের কাজে সময় কাটাতে পারেন।
৮. প্রাকৃতিক উপাদান
কিছু প্রাকৃতিক উপাদান পিম্পল দূর করতে সহায়ক হতে পারে:
– টি ট্রি অয়েল: এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, যা পিম্পল হ্রাস করে।
– অ্যালোভেরা: ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং ত্বক শীতল রাখতে সহায়ক।
– মধু: অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কার্যকর।
৯. চিকিৎসকের পরামর্শ
যদি পিম্পল গুরুতর হয় এবং ঘরোয়া প্রতিকার কাজ না করে, তাহলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। তারা বিভিন্ন চিকিৎসা যেমন রেটিনয়েড ক্রিম, অ্যান্টিবায়োটিক, বা হরমোনাল চিকিৎসা প্রস্তাব করতে পারেন।
১০. স্পট ট্রিটমেন্ট
পিম্পল স্পট ট্রিটমেন্ট প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন। এতে সাধারণত স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পারক্সাইড থাকে, যা পিম্পলের উপর সরাসরি প্রয়োগ করা হয়।
১১. মেকআপ ব্যবহারে সতর্কতা
যদি মেকআপ ব্যবহার করেন, তবে নন-কমেডোজেনিক এবং অয়েল-ফ্রি প্রোডাক্ট বেছে নিন। রাতে মেকআপ ঠিকমত পরিষ্কার করে তবেই ঘুমাতে যান।
১২. পর্যাপ্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার
বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের অবস্থা খারাপ করতে পারে।
১৩. নিয়মিত ফেসিয়াল
মাসে একবার ফেসিয়াল করা যেতে পারে, যা ত্বকের রন্ধ্র পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।
১৪. হালকা ময়েশ্চারাইজার
ত্বক হাইড্রেটেড রাখতে হালকা, নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকও পিম্পলের কারণ হতে পারে।
সঠিক ত্বক পরিচর্যা এবং জীবনযাত্রার মাধ্যমে পিম্পল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে, যদি সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।