
Rabies কেন হয়? আর হলে কি করনীয় | 2024
রেবিস (Rabies) একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত সংক্রামিত প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর আক্রমণ করে, যার ফলে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে প্রদাহ হয় এবং অবশেষে মৃত্যু ঘটে যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়।
Rabies কিভাবে হয় :
Rabies মূলত সংক্রামিত প্রাণীর লালা মাধ্যমে ছড়ায়, যা সাধারণত কামড়ানোর মাধ্যমে ঘটে। তবে এটি কিছু ক্ষেত্রে চুলকানি, চাটানো বা আঁচড়ের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। রেবিসের সংক্রমণ কীভাবে ঘটে তা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
সংক্রমণের প্রধান পথ:
1. কামড়ানো: এটি রেবিস সংক্রমণের প্রধান পথ। সংক্রামিত প্রাণী (যেমন কুকুর, বিড়াল, বাদুড়, শিয়াল ইত্যাদি) কামড়ালে ভাইরাসটি লালার মাধ্যমে ক্ষতস্থানে প্রবেশ করে।
2. চাটানো বা চুলকানো: সংক্রামিত প্রাণী যদি মানুষের ত্বক (বিশেষ করে খোলা ক্ষত বা ছিদ্রযুক্ত ত্বক) চাটে, তাহলেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
3. আঁচড়ানো: সংক্রামিত প্রাণীর নখর যদি ত্বক খোঁচায় এবং সেই নখরে লালা লেগে থাকে, তাহলে ভাইরাসটি সংক্রমিত হতে পারে।
সংক্রমণের অপ্রচলিত পথ:
1. অঙ্গ প্রতিস্থাপন: রেবিস আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে।
2. শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে: বাদুড়ের গুহায় বা ল্যাবরেটরিতে উচ্চমাত্রার বাতাসে রেবিস ভাইরাস শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
সংক্রমণের ধাপ:
1. প্রবেশ ধাপ: ভাইরাসটি ত্বক বা মিউকাস মেমব্রেনের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে।
2. প্রাথমিক গতি: ভাইরাসটি প্রবেশ করার পর পার্শ্ববর্তী পেশী কোষে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে স্নায়ু কোষের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হয়।
3. প্রসারণ ধাপ: কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছানোর পর ভাইরাসটি দ্রুত গতি প্রাপ্ত হয় এবং মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
4. নিষ্ক্রমণ ধাপ: কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে ভাইরাসটি আবার পরিপার্শ্বিক স্নায়ুর মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে লালার গ্রন্থিতে পৌঁছে এবং পুনরায় লালার মাধ্যমে পরিবাহী হয়।
রেবিসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনও সন্দেহজনক কামড় বা সংস্পর্শ ঘটে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে।
Kidney এর সমস্যার ঘরোয়া এবং মেডিকেল সমাধান | 2024
Rabies এর লক্ষণ :
রেবিস হলে মানুষের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। এটি দুটি পর্যায়ে লক্ষণ প্রকাশ করে: প্রাথমিক এবং পরবর্তী।
প্রাথমিকলক্ষণ:
- জ্বর: সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি জ্বর।
- মাথাব্যথা: মৃদু থেকে তীব্র মাথাব্যথা।
- ক্লান্তিওদুর্বলতা: শারীরিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব।
- কামড়েরস্থানেঅস্বস্তি: কামড়ের স্থানে ঝনঝনানি, ব্যথা, বা অস্বস্তি।
পরবর্তীলক্ষণ:
- উত্তেজনাওঅস্থিরতা: আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত উত্তেজিত ও অস্থির হয়ে ওঠে।
- বিভ্রান্তি: মানসিক বিভ্রান্তি ও অস্পষ্ট চিন্তা।
- পেশীনিয়ন্ত্রণেরঅভাব: পেশীগুলোর অস্বাভাবিক স্পন্দন বা নিয়ন্ত্রণ হারানো।
- হাইড্রোফোবিয়া (জলাতঙ্ক): পানির ভয়, পান করতে চাইলেও গলা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- অস্বাভাবিকআচরণ: অসামান্য ও অস্বাভাবিক আচরণ, এমনকি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা।
- হ্যালুসিনেশন: বিভিন্ন ধরনের হ্যালুসিনেশন দেখা দিতে পারে।
- প্যারালাইসিস (অঙ্গবৈকল্য): ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অংশ প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে।
চূড়ান্তপর্যায়:
- কোমা: রোগী কোমায় চলে যেতে পারে।
- মৃত্যু: চিকিৎসা না হলে অবশেষে মৃত্যু ঘটে, সাধারণত সংক্রমণের পর ২ থেকে ১০ দিনের মধ্যে।
Rabies হলে কি করনীয় :
রেবিস হলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একবার লক্ষণগুলি প্রকাশ পেলে, রোগটি প্রায়ই মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তাই কামড়ানোর পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
রেবিস হলে তাৎক্ষণিক ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। রেবিস একটি মারাত্মক রোগ, তবে দ্রুত চিকিৎসা নিলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এখানে করণীয় পদক্ষেপগুলি উল্লেখ করা হলো:
১. কামড়ানোর পর প্রাথমিক পদক্ষেপ:
ক্ষত পরিস্কার করা: কামড়ানোর জায়গাটি সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধরে ভালোভাবে ধুতে হবে। এটি ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার: ধোয়ার পর ক্ষতস্থানে অ্যান্টিসেপটিক বা জীবাণুনাশক লাগাতে হবে।
২. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়া: দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে। সেখানে একজন চিকিৎসক পরবর্তী পদক্ষেপগুলো ঠিক করবেন।
রেবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন: কামড়ানোর পর প্রথম ধাপ হিসেবে রেবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন (RIG) ইনজেকশন দেওয়া হতে পারে। এটি সরাসরি কামড়ানোর স্থানে দেওয়া হয়।
রেবিস ভ্যাকসিন: রেবিস প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। সাধারণত প্রথম ডোজ দেওয়া হয় কামড়ানোর দিন, এরপর ৩, ৭, ১৪, এবং ২৮ তম দিনে দেওয়া হয়।
৩. সংক্রামিত প্রাণীকে চিহ্নিত করা:
প্রাণীটির ধরন নির্ধারণ: সংক্রামিত প্রাণীটি যদি ধরা যায় তবে এটি প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছে জানানো উচিত। তারা প্রাণীটি পরীক্ষা করে রেবিস আছে কিনা নিশ্চিত করতে পারবে।
৪. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
পোষা প্রাণীর ভ্যাকসিনেশন: পোষা প্রাণীদের রেবিস ভ্যাকসিন নিয়মিতভাবে দেওয়া।
প্রাণীর সাথে সতর্কতা: সন্দেহজনক বা বুনো প্রাণীর সাথে সংস্পর্শ এড়ানো।
রেবিস সচেতনতা: রেবিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং জানানো কেন এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়।
রেবিসের লক্ষণগুলো শুরু হওয়ার পর চিকিৎসা কার্যকর নয়, তাই কামড়ানোর সাথে সাথেই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।